Header Ads

ডিপ্রেশন Drepration এর ভয়াবহতা ও কি কি লক্ষণ থাকলে আপনি ডিপ্রেশনের ভুগছেন জেনে নিন

 

ডিপ্রেশন Drepration

ডিপ্রেশন কারণ, লক্ষণ, ক্ষতিকর দিক, প্রতিকার এবং বাঁচার উপায়

ডিপ্রেশন (বিষণ্নতা) হলো একটি মানসিক রোগ যা মানুষকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে হতাশাগ্রস্ত নেতিবাচক অবস্থায় রাখে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা মানসিক শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডিপ্রেশন একটি প্রচলিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ডিপ্রেশনের কারণ

ডিপ্রেশনের সুনির্দিষ্ট একটি কারণ নেই; এটি বিভিন্ন কারণের সমষ্টি হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিম্নরূপ:
1.
জিনগত কারণ: পরিবারের ইতিহাসে ডিপ্রেশন থাকলে এটি পরবর্তী প্রজন্মে আসতে পারে।
2.
মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন: মস্তিষ্কের সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নরএপিনেফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা ডিপ্রেশন সৃষ্টি করতে পারে।
3.
মানসিক আঘাত: শৈশবে বা জীবনের যে কোনো পর্যায়ে মানসিক আঘাত, যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, বৈবাহিক সমস্যা, বা চাকরি হারানোর মতো পরিস্থিতি ডিপ্রেশনকে উসকে দিতে পারে।
4.
বিপর্যয়মূলক অভিজ্ঞতা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুঃখজনক অভিজ্ঞতা বা অপরাধের শিকার হওয়া ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।
5.
শারীরিক অসুস্থতা: দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন ক্যান্সার বা হৃদরোগ, ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
6.
অ্যালকোহল এবং মাদকাসক্তি: মাদক এবং অ্যালকোহলের উপর নির্ভরশীলতা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।

ডিপ্রেশনের লক্ষণ

ডিপ্রেশন বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়, এবং এর লক্ষণগুলো সাধারণত দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
1.
স্থায়ীভাবে দুঃখবোধ: সবসময় মনমরা দুঃখে থাকেন।
2.
আগ্রহহীনতা: কোনো কাজে আগ্রহ না থাকা বা জীবনের প্রতি উদাসীনতা।
3.
শারীরিক ক্লান্তি: কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
4.
ঘুমের সমস্যা: ঘুম না আসা (ইনসমনিয়া) বা অতিরিক্ত ঘুমানো।
5.
ক্ষুধা ওজন পরিবর্তন: অতিরিক্ত খাবারের প্রতি ঝোঁক বা সম্পূর্ণ আগ্রহ হারানো।
6.
অধৈর্য বা উদ্বেগ: সামান্য বিষয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ।
7.
আত্মবিশ্বাসের অভাব: নিজেকে তুচ্ছ মনে করা বা অপরাধবোধে ভোগা।
8.
আত্মহত্যার চিন্তা: জীবনকে অর্থহীন মনে করা বা আত্মহত্যার চিন্তা।

ডিপ্রেশন Drepration

ডিপ্রেশনের ক্ষতিকর দিক

ডিপ্রেশন মানসিক শারীরিক উভয়ভাবেই অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কিছু প্রধান ক্ষতিকর দিক হলো:
1.
সম্পর্কে সমস্যা: ডিপ্রেশন ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোতে দূরত্ব তৈরি করে।
2.
কর্মজীবনে ব্যাঘাত: ডিপ্রেশনের কারণে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায় এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়।
3.
স্বাস্থ্যহানী: শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া, হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা বা ঘুমের সমস্যা তৈরি হয়।
4.
আত্মহত্যার ঝুঁকি: ডিপ্রেশন ব্যক্তিকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, যেখানে সে আত্মহত্যার চিন্তা করতে পারে।
5.
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: ডিপ্রেশন মানুষকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যা আরো বেশি একাকীত্ব তৈরি করে।

ডিপ্রেশনের প্রতিকার

ডিপ্রেশনের চিকিৎসা সম্ভব, এবং সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিছু সাধারণ প্রতিকারের উপায় হলো:
1.
মানসিক চিকিৎসা: পেশাদার থেরাপিস্ট বা কাউন্সিলরের সহায়তায় ডিপ্রেশন মোকাবিলা করা সম্ভব। সাইকোথেরাপি (টক থেরাপি), বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
2.
ঔষধ: ডিপ্রেশনের গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষধ প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ঔষধ ব্যবহার করা উচিত।
3.
ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
4.
সামাজিক যোগাযোগ: পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, কথা বলা বা মন খুলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারে।
5.
সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
1.
মানসিক পরিচর্যা: প্রতিদিনের মানসিক চাপে পড়ে না গিয়ে সময়ে সময়ে মানসিক বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
2.
নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
3.
ধ্যান যোগব্যায়াম: ধ্যান এবং যোগব্যায়াম মনোসংযোগ মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
4.
নিয়ন্ত্রিত সময়সারণী: ব্যক্তিগত কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমায়।
5.
সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া: ডিপ্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার  

ডিপ্রেশন একটি মারাত্মক কিন্তু চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা। এর কারণ, লক্ষণ প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন থাকলে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিজেকে ভালোবাসা, সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে এই রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়

আরো দেখুন..

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.