মাথার সিটি স্ক্যান কি? কেন করা হয়? মাথার সিটি স্ক্যান খরচ কত? CT scan of brain
মেডিকেল সায়েন্সের অন্যতম উদ্ভাবন সিটি স্ক্যান (CT Scan), যা মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রযুক্তি ব্রেইনের ভেতরের গঠন এবং সমস্যাগুলো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম। ব্লগটিতে আমরা সিটি স্ক্যানের প্রয়োজনীয়তা, খরচ, উপকারিতা এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সিটি স্ক্যান কী এবং কেন এটি করা হয়?
- সিটি স্ক্যান (Computed Tomography Scan) হলো এক ধরনের রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার পদ্ধতি, যা একাধিক এক্স-রে এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে শরীরের বিশেষ অঙ্গ বা অংশের বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে।
- ব্রেইনের ক্ষেত্রে, এটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়:
- স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধা আছে কিনা তা জানতে।
- ট্রমা বা আঘাত: মাথায় আঘাতের কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা হাড় ভেঙে গেছে কিনা তা পরীক্ষা করতে।
- টিউমার: ব্রেইনে টিউমার বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি চিহ্নিত করতে।
- সংক্রমণ: মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো রোগ নির্ণয়ে।
- স্নায়ুর সমস্যা: স্নায়ুর সংকোচন বা ডিসঅর্ডার নির্ধারণ করতে।
সিটি স্ক্যানের খরচ
সিটি স্ক্যানের খরচ দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এবং হাসপাতালের মান অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত সিটি স্ক্যানের খরচ 3000 টাকা থেকে ৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। তবে সরকারি হাসপাতালে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
খরচের উপর নির্ভর করে:
- স্ক্যানের ধরন (সাধারণ বা কনট্রাস্টসহ)।
- ব্যবহৃত মেশিনের মান।
- পরীক্ষা রিপোর্ট পাওয়ার সময়সীমা।
- সিটি স্ক্যানের উপকারিতা
- দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল: কয়েক মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ ছবি পাওয়া যায়।
- স্ট্রোকের তাত্ক্ষণিক সনাক্তকরণ: সময়মতো স্ট্রোক নির্ধারণ চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- কম্প্রিহেনসিভ চিত্র: একাধিক অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- অপারেশনের প্রস্তুতি: মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের আগে সঠিক জায়গা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।
- নন-ইনভেসিভ প্রক্রিয়া: এটি শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ ছাড়াই পরীক্ষা করতে সক্ষম।
সিটি স্ক্যানের ক্ষতিকর দিক
যদিও সিটি স্ক্যান খুবই কার্যকর, তবুও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে:
- রেডিয়েশনের প্রভাব: সিটি স্ক্যানে এক্স-রে রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়, যা অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- অ্যালার্জি: কনট্রাস্ট ডাই ব্যবহারের ফলে কারও কারও মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকি: রেডিয়েশন ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে, তাই গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে চলা হয়।
- দাম তুলনামূলকভাবে বেশি: অনেক রোগীর জন্য সিটি স্ক্যানের খরচ বহন করা কষ্টকর হতে পারে।
- বারবার ব্যবহারের ঝুঁকি: নিয়মিত বা ঘন ঘন সিটি স্ক্যান করলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
- সিটি স্ক্যান করার পূর্বে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত
- পরীক্ষার আগে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা।
- কনট্রাস্ট ডাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি আছে কিনা তা জানানো।
- গর্ভাবস্থা বা কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে চিকিৎসককে জানানো।
- পরীক্ষা শেষে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
উপসংহার
সিটি স্ক্যান ব্রেইনের রোগ নির্ণয়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পদ্ধতি। তবে এটি ব্যবহারের সময় সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোর প্রতি নজর দেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে সিটি স্ক্যান করালে চিকিৎসা আরও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিটি স্ক্যান করানোই সবচেয়ে নিরাপদ এবং ফলপ্রসূ।


.jpeg)
কোন মন্তব্য নেই